স্বদেশ ডেস্ক:
রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম করোনা চিকিৎসায় সরবরাহকৃত সুরক্ষা সামগ্রী নিয়েও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য খাতসহ অন্যান্য সেক্টরেও প্রতারণার বিষয়টি তদন্তে উঠে আসছে বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. আবদুল বাতেন। গতকাল শনিবার দুপুর ২টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ডিবিতে রিমান্ডে থাকা সাহেদের বিষয়ে এসব তথ্য জানান তিনি।
সাহেদ ফেসবুকে ভুয়া কোম্পানির নামে পেজ খুলে প্রতারণা করতেন উল্লেখ করে আবদুল বাতেন বলেন, ‘সাহেদ ফেসবুকে আলবার্ট গ্লোবাল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি নামে পেজ খুলে এই করোনাকালীন সময়ে পিপিই, মাস্ক ও ডেথ বডি ক্যারিয়ার ব্যাগ সাপ্লাই দিয়েছেন। স্বাস্থ্য খাতে তিনি প্রায় ৫০ হাজার পিপিই, ১ লাখ মাস্ক ও ২০ হাজার বডি ক্যারিয়ার ব্যাগ সাপ্লাই দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে আলবার্ট গ্লোবাল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি নামের কোনো গার্মেন্টসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তিনি সাব কন্ট্রাক্টে ছোট গার্মেন্টস ও ফ্যাক্টরি থেকে নিম্নমানের কাপড় দিয়ে এসব সুরক্ষা সামগ্রী তৈরি করিয়েছিলেন। আমরা ধারণা করছি তার সাপ্লাই দেওয়া নি¤œমানের এসব সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করে প্রথমদিকে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে এ বিষয়ে তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ডিবি বলেন, ‘সাহেদের প্রতারণার সংশ্লিষ্ট আমরা যেসব অনিয়ম পেয়েছি তা আইনানুযায়ী মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে জানাব।’ প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সাহেদ ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদে রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবদে সাহেদ প্রতিদিনই নতুন নতুন গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্য দিচ্ছেন। সাহেদের বক্তব্যে উঠে আসছে ভয়ঙ্কর সব প্রতারণার বর্ণনা। একই সঙ্গে সাহেদ তার পৃষ্ঠপোষকদের সম্পর্কেরও দিচ্ছেন নানা তথ্য। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই এসব তথ্য প্রকাশ করতে চান না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। সাহেদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই ও অনুসন্ধান শেষে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যদেরও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাই রাজধানীর উত্তরার কোভিড ডেডিকেটেড রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালান র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান পরিচালনাকালে উঠে আসে রিজেন্ট হাসপাতালের অনিয়মের ভয়াবহ সব তথ্য। পরীক্ষা না করেই দেওয়া হতো করোনা পজিটিভ/নেগেটিভ রিপোর্ট। পরে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুরের শাখা দুটি সিলগালা করে দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। আর করোনা চিকিৎসার নামে প্রতারণাসহ নানা অভিযোগে সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করে র্যাব। অভিযানের পর থেকে পলাতক সাহেদ গত বুধবার ভোরে বোরকা পরে পালিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্তে র্যাবের হাতে ধরা পড়েন। পরে তাকে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে আসা হয় ঢাকায়। তাকে নিয়ে তার উত্তরার কার্যালয়ে অভিযান চালায় র্যাব।